ইসলামী আইনের মৌলিক উৎস ও নীতি সমূহ | Islamic Education | Islamic Roles and Laws
ইসলামী আইনের মৌলিক উৎস ও নীতি সমূহ | Islamic Education | Islamic Roles Laws
ইসলামী আইন, যা ইসলাম ধর্মে শরিয়া নামে পরিচিত, কুরআন এবং হাদিস থেকে প্রাপ্ত মৌলিক নীতির উপর ভিত্তি করে যা প্রতিষ্টিত এবং এটি ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় এবং আইনি বিষয়ের বিভিন্ন দিককে অন্তর্ভুক্ত করেছে এমনভাবে যা একটি সমাজ ও রাষ্ট্রকে কল্যাণ সমাজ ও কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারে। আজরে লেখায় আমরা ইসলামী আইনের কিছু মৌলিক নীতি নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করছি।
ইসলামী আইনের মৌলিক নীতিসমূহ:
তাওহিদ (স্রষ্টার সার্বভৌমত্ব ও একত্ব): তাওহিদের ধারণাটি ইসলামের কেন্দ্রবিন্দু এবং ঈশ্বরের পরম একত্বকে স্বীকৃতি প্রদান করা। ইসলামের সমস্ত আইন ও নীতি স্রষ্টার একত্বে বিশ্বাস থেকে উদ্ভূত হয়েছে। এটির উপর ভিত্তি করেই একটি মুসলিম জীবন পরিচালিত হতে হয়। এই স্রষ্টার একত্ববাদের উপর দাড়িয়েই ইসলাম ধর্ম তার সমস্ত নীতি প্রণয়ন ও পরিচালনা করে থাকে। তাই স্রষ্টার একত্ববাদই ও সার্বভৌমত্বই হলো ইসলাম ধর্মে কেন্দ্রবিন্দু।
ইসলামী আইনের উৎস:
ইসলামী আইনের কয়েকটি উৎস রয়েছে। যেমন কোরান- যা আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিল হয়েছে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা: এর প্রতি, হাদিস- যা নবী সা; এর কথা, কাজ ও মৌন সম্মতিকে বুঝায়, ইজমাউল উম্মাহ, কেয়াস ইত্যাদি।
প্রাথমিক উত্স হিসাবে কুরআন:
কুরআনকে ইসলামী আইনের প্রাথমিক এবং চূড়ান্ত উত্স হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে, কোরান মাজিদ আল্লাহর আক্ষরিক শব্দ হিসাবে নবী মুহাম্মদ সা: এর কাছে নাজিল হয় এবং মুসলমানদের জন্য মৌলিক নির্দেশিকা হিসাবে কাজ করে। যা প্রায় চৌদ্দশত বছর আগে থেকে এখনও অবিকল ও বিকৃতিমুক্ত রয়েছে। এবং পৃথিবীতে এর চেয়ে বেশি পঠিত আর কোনো গ্রন্থ নেই। এটি মুসলমান সমাজের অতী গুরুত্বপূর্ণ কিতাব, যা হিফজ তথা মুখস্ত রাখা সওয়াবের কাজ হিসাবে গন্য করা হয়ে থাকে।
উৎস হিসেবে হাদীস:
নবী মুহাম্মদ সা: এর বাণী, কাজ ও অনুমোদন নিয়ে গঠিত হাদিস হল ইসলামী আইনের আরেকটি অপরিহার্য উৎস। যা ইসলামী আইনে দ্বিতীয় উৎস হিসাবে সাব্যস্ত করা হয়ে থাকে। হাদিস কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের প্রসঙ্গ বিশদ বিবরণ প্রদান করে। তাই এটিকে কোরান এর বাস্তব ও জ্বলন্ত ব্যাখ্যা হিাসাবেও মান্য করা হয়ে থাকে।
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ:
ইসলাম ধর্মের অতি গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি স্তম্ভ হল ইসলামে উপাসনা ও অনুশীলনের মৌলিক কাজ, যা একজন মুসলমানের বিশ্বাস ও অনুশীলনের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে ঈমানের ঘোষণা (শাহাদা), নামাজ (সালাহ), দান (জাকাত), রমজান মাসে রোজা রাখা (সাওম), এবং মক্কা ও মদিনায় গিয়ে (হজ) তীর্থযাত্রা পালন করা। এগুলোকে ইসলামের মৌলিক 5 টি স্তম্ভ বলে ধরা ও মান্য করা হয়ে থাকে। এগুলোর প্রতিটি কোরান ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত আহকাম। তাই এর কোনোটিকেই বাদ দিয়ে বা বিকৃত করে ইসলামী আইনের মধ্যে থাকার সুযোগ নেই।
ফিকহ (আইনশাস্ত্র):
ফিকহ বলতে ইসলামী আইনশাস্ত্রকে বোঝায়, যা আইনী রায়গুলি বের করার জন্য শরিয়া নীতিগুলির বোঝা এবং ব্যাখ্যা জড়িত থাকে। ইসলামী পন্ডিতরা ইসলামী আইনগত মতামত প্রণয়নের জন্য কুরআনের ব্যাখ্যা, হাদিস বিশ্লেষণ, ঐক্যমত (ইজমা) এবং সাদৃশ্যমূলক যুক্তি (কিয়াস) সহ বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেন। এর মাধ্যমে তারা একটি সময় উপযোগী ও ইসলামী আইনের মৌলিক নীতির মধ্যে থেকে সমাধান বের করার প্রায়স পান। ফলে, ফিকহ তথা ইসলামী আইনশাস্ত্রকে ইসলাম ধর্মে অবশ্যই পালনীয় ব্যাপার হিসাবে মান্য করা হয়ে থাকে।
সাম্য ও ন্যায়বিচার:
ইসলাম সাম্য ও ন্যায়বিচারের নীতির ওপর জোর দেয়। মুসলমানদের জাতি, জাতীয় বা সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে সকল ব্যক্তির সাথে ন্যায্য এবং ন্যায়সঙ্গত আচরণ করতে বাধ্যতামূলক নির্দেশ প্রদান করে। ফলে, ধরেই নেয়া যায় যে, সাম্য ও ন্যায়বিচার ইসলামী আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
ব্যক্তিগত নৈতিকতা এবং নৈতিকতা:
ইসলামী শরিয়ায় ব্যক্তিগত আচার-আচরণ এবং নৈতিকতার নির্দেশিকা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মুসলমানদের নৈতিক আচরণের একটি উচ্চ মান মেনে চলার নির্দেশ করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে সততা, সত্যবাদীতা, দয়া এবং সহানুভূতি।
পারিবারিক আইন:
ইসলামী আইন বিবাহ, তালাক, উত্তরাধিকার এবং সন্তানের হেফাজত সহ পারিবারিক বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা প্রদান করা রয়েছে। ইসলামে পারিবারিক সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয় এবং পরিবারের স্থিতিশীলতা ও সুস্থতা বজায় রাখা একটি মৌলিক নীতি। যা অবশ্যই পালনীয় কর্তব্য।
সুদের নিষেধাজ্ঞা (রিবা):
ইসলামী আইন সুদ বা সুদ আদায় নিষিদ্ধ করেছে। এটি এই নীতির উপর ভিত্তি করে যে সম্পদ ন্যায্য এবং নৈতিক উপায়ে তৈরি করা উচিত এবং শোষণমূলক অনুশীলনগুলি নিষিদ্ধ হতে হবে। যা সুদ বিহীন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করে।
ধর্মের স্বাধীনতা:
ইসলাম ব্যক্তিদের তাদের ধর্ম বেছে নেওয়া এবং পালন করার স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়। যদিও ইসলাম প্রাথমিক এবং পছন্দের বিশ্বাস, মুসলমানদেরকে সংলাপে জড়িত হতে এবং অন্যান্য ধর্মের মানুষের সাথে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করতে উৎসাহিত করা হয়। এর ফলে, কোনো মুসলিম অন্য কোনো লোককে তার ধর্ম গ্রহণ বা পালনে বাধা প্রদান করতে পারেন না।
উপসংহার:
এই পর্যায়ে এটা লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ যে, ইসলামের মধ্যে বিভিন্ন চিন্তাধারার মধ্যে ইসলামিক আইনের ব্যাখ্যা ভিন্ন হতে পারে, যা মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন আইনি ঐতিহ্য এবং অনুশীলনের দিকে পরিচালিত হয়ে আসছে। উপরন্তু, আধুনিক প্রেক্ষাপটে ইসলামী আইনের সমসাময়িক প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা ও বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। তবুও ইসলামী মৌলিক নীতিসমূহ প্রায় অবিকল থেকেছে। এখনো আছে। এটি অবশ্যই ইসলামী আইন শাস্ত্রকে অনন্য বৈশিষ্ট্য প্রদান করে।
.png)