পীরের মুরিদ হওয়া কি জরুরি? কামেল পীরের পরিচয় কি? ||What is the identity of Kamel Peer?
পীরের মুরিদ হওয়া কি জরুরি? কামেল পীরের পরিচয় কি? ||What is the identity of Kamel Peer?
ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের মাঝে পীর ধরা অর্থ্যাৎ পীরের মুরিদ হওয়া নিয়ে যতেষ্ট চর্চা রয়েছে। আজকের পোস্টে আমরা পীরের মুরিদ হওয়া এবং কামেল পরীরের পরিচয় নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করছি। আশা করি পাঠক, আপনাদের অনেক জানার ইচ্ছার সমাধান হবে।
পীর Peer কি?
পীর একটি ফার্সি শব্দ। যার অর্থ সাধারণত: উস্তাদ, শিক্ষক, গুরু, প্রবীন, শায়খ ইত্যাদি । সাধারণত ইসলামী সূফীবাদী দর্শন হতে এই পীর প্রথা প্রচলন হয়। এর মাধ্যমে পীর তাঁর মুরিদগণকে ইসলামী তাসাউফ শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে আধ্যাতিক শিক্ষা দীক্ষা দিয়ে থাকেন। তবে আমাদের দেশে বেশীরভাগ পীরগণ ইসলামের মানদণ্ড থেকে যোজন যোজন দূরে অবস্থান করে থাকেন। এর নানাবিধ কারণ হতে পারে। আমাদের আলোচ্য বিষয় এগুলো নয়। আমরা আজকে আলোচনা করবো মূলত কামেল পীরের পরিচয় নিয়ে।
কামেল পীরের পরিচয়:
কোরান ও হাদিসের মানদণ্ডের আলোকে কামেল পীর হতে হলে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। সেগুলো নিচে আলোচনা করছি।
১। আবশ্যক পরিমাণ দ্বীনি ইলম তথা ধর্মীয় জ্ঞান থাকতে হবে। কোরান মাজিদ ও হাদীসের জ্ঞান, সাথে অবশ্যই ইলমে ফিকহ সহ প্রচলিত অন্যান্য জ্ঞান।
২। শরীয়াত অনুযায়ী সঠিকভাবে আমল থাকতে হবে। যিনি পীর, তাঁর মধ্যে শরীয়াতের সকল হুকুম আহকাম পালনকরার মানসিকতা এবং তা পালনকারী হবেন।
৩। মানুষদের ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধদান কারী হবেন।
৪। যিনি পীর হবেন, আবশ্যিকভাবে তাঁর অন্য কোনো কামেল পীরের সাথে সম্পর্ক থাকতে হবে। এভাবেও বলা যায় যে, তিনি অবশ্যই অন্য কোনো কামেল পীরের মুরিদ ও খেলাফতপ্রাপ্ত হবেন।
৫। আলেমদিগকে ভালবাসবেন। আলেমগণের সাথে পরামর্শ করতে ও তাদের পরামর্শ মানতে দ্বীধা করেন না।
৬। যিনি পীর, তাঁর মধ্যে এমন গুণ থাকবে,যে তাহার সংস্পর্শ অবলম্বনে আখেরাতের প্রতি আগ্রহ এবং দুনিয়ার প্রতি ঘৃণা জন্মে।
(মাওয়ায়েজে আশরাফিয়া অবলম্বনে)।
পীর প্রাসংগিক হাদিস:
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি বিভিন্ন পদ্ধতির কথা শিক্ষা করবে মানুষের হৃদয়কে বশ করার উদ্দেশ্যে, আল্লাহ পাক তার কৃত নফল কিংবা ফরজ কোনো ইবাদতই কবুল করবেন না। (মেশকাত শরীফ)।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রা:) হতে বর্ণিত আছে, নবী (সা:) বলেছেন, দুনিয়ায় প্রতিযোগীতা করে হাছেল করার উপযোগী গুণ মাত্র দুটি- দানশীলতা ও ধর্মজ্ঞান।
ক) যাকে আল্লাহ তায়ালা ধন দেীলত দান করিয়াছেন আর সে উহা জমা না করিয়া সর্বদা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে।
খ) অপর এক ব্যক্তি যাকে আল্লাহ তায়ালা ধর্মজ্ঞান দান করেছেন আর সে উক্ত জ্ঞান দ্বারা মানব সমস্যার সমাধান করে দেন এবং অন্য লোকদের শিক্ষা দেন।
পীরের মুরিদ হওয়া কি জরুরি?
আমাদের ধর্মীয় কালচারে বিশেষ করে পারস্য ও ভারতীয় উপমহাদেশে পীর প্রথা ব্যপকভাবে প্রচলিত। আমাদের দেশে অনেকে মনে করেন পীর ধরা তথা পীরের মুরিদ হওয়া জরুরী। আবার অনেকে মনে করেন, পীর প্রথা একটি ফালতু অহেতুক কাজ। যেখানে নবী (সা:) বলে গিয়োছেন, - ”আমি তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, তোমরা যদি এ দুটিকে আকড়ে ধরো, তবে কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না। আর এই দুটি বস্বতু হলো- কোরান এবং সুন্নাহ।”
সুতরাং পীরের মুরিদ হওয়া জরুরি কিছু না। কিন্তু ঠিক বিপরীত মেরুতেও অনেকের অবস্থান লক্ষ করা যায়।
প্রকৃত পক্ষে, পীর প্রথা বা পীরের মুরিদ হওয়া অহেতুক বা ফালতু কোনো কাজ নয়। এটি মূলত কোরান ও হাদীসসহ আকাবীরদের মত অনুযায়ী একটি বিশুদ্ধ পন্থা। যদি এসবের মাধ্যমে কোনো ফেতনা বা বেদয়াত জারি করা না হয়।সর্ব প্রথম যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবেন: জানতে পড়ুন।
পরিশেষ:
আলোচনার শেষ প্রান্তে এসে আমরা বলতে পারি যে, পীর প্রথা যদিও সরাসরি কোরান বা হাদিস দ্বারা আদিষ্ট কোন প্রথা নয়, তবুও বহু আকাবীরগণের মতে এটি একটি বিশুদ্ধ আধ্যতিক সাধনার পথ। এর দ্বারা বহু মানুষ সুপথ ও আল্লাহ কে পেয়েছেন। ফলে, এটি নি;সন্দেহে একটি ভাল পন্থা, যতক্ষণ পর্যন্ত এটি শরীয়াত বিরোধী কোনো মত প্রচার বা বিশ্বাস করে।
