সর্ব প্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী হবে কে এবং জান্নাতে মানুষের বয়স কত হবে?

সর্ব প্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী হবে কে এবং জান্নাতে মানুষের বয়স কত হবে?


আল্লাহ তায়ালা মানব জাতীকে দুনিয়াতে সৃষ্টি করে পরীক্ষা নিচ্ছেন। ভাল এবং মন্দ দুুটি রাস্তা বলেও দিয়েছেন। যারা এই দুনিয়ায় ভাল কর্ম করবে, তারা মৃত্যুর পর জান্নাতে প্রবেশ করবে। যেখানে রয়েছে অনন্ত সুখ। অপরদিকে যারা দুনিয়ায় মন্দ পথ অবলম্বন করবে, মন্দ পথে জীবন পরিচালনা করবে, তাদের জন্য রয়েছে অনন্ত শাস্তির ব্যবস্থা বা জাহান্নাম। যেখানে রয়েছে কৃত অপরাধের শাস্তি।


আজকে আমাদের আলোচন্য সূচি জান্নাত নিয়ে। আসুন জেনে নিই সর্ব প্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী হবে কে?


সর্ব প্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী হবে কে এবং জান্নাতে মানুষের বয়স কত হবে?


সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী হবে কে:


রাসুল (সা:) হতে বর্ণিত আছে, যখন কেয়ামতের দিন আসবে তখন চার প্রকার ব্যক্তিকে হিসাব ও আজাব ব্যতিত জান্নাতের দরজায় হাজির করা হবে। সেই চার প্রকার মানুষ হলো-

1। ঐ আলেম যে তার এলম অনুযায়ী আমল করেছেন।

2। ঐ হাজী যে কোনো প্রকার ত্রুটি ছাড়া হজ্জ করেছেন।

3। ঐ শহীদ (আল্লাহর রাস্তায় মৃত্যুবরণকারী) যে রণাঙ্গণে জীবন উৎসর্গ করেছেন।

4। ঐ দানশীল ব্যক্তি যে হালাল মাল উপার্জন করেছেন এবং উহা হতে রিয়া ব্যতিত আল্লাহর রাস্তায় খরচ করেছেন। 


তারা পরস্পরে জান্নাতে সর্ব প্রথম প্রবেশ করার জন্য গোলমাল করবেন। তখন আল্লাহ তায়ালা জিবরাইল আ: কে ফাসালা করার জন্য পাঠাবেন। জিব্রাইল আ: সর্বপ্রথম শহীদকে জিজ্ঞাসা করবেন- তুমি দুনিয়াতে কী আমল করেছো?  তখন সে উত্তর দিবে- আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আল্লাহর পথে জিহাদের ময়দানে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছি। জিব্রাঈল বলবেন- ‍তুমি কোথা থেকে শহীদের মর্যাদা সম্পর্কে জেনেছো? সে বলবে- আলেমগণের থেকে জেনেছি। তখন জিব্রাইল আ: বলবেন- তবে তো আলেমগণ তোমার থেকে বেশি মর্যাদা সম্পন্ন।


অতপর জিব্রাইল আ: হাজীসাহেব কে জিজ্ঞাসা করবেন এবং পূর্বের ন্যায় কথোপকথন হবে। তারপর দানশীল ব্যক্তির সাথে অনুরূপ কথোপকথন হবে। সর্বশেষ আলেম ব্যক্তি বলবেন- হে আল্লাহ, আমি দানশীল ব্যক্তির এহসান দ্বারা ইলম অর্জন করেছিলাম। ইহা শুনে আল্লাহ তায়ালা বলবেন- আলেম ব্যক্তি ঠিক বলেছেন। অতপর আল্লাহ তায়ালা রেজওয়ান ফেরেস্তাকে বলবেন- হে রেজওয়ান, জান্নাতের দরজা খোলে দাও , প্রথমে দানশীল ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করুক, তারপর অন্যরা প্রবেশ করবে। ( মেশকাতুল আনওয়ার)। 



ফাতেমার আগে কে জান্নাতে যাবে? :


হযরত ফাতেমা রা: সম্পর্কে বলা হয় যে, হযরত ফাতেমা রা: জান্নাতে মহিলাদের সর্দার হবেন। তিনি জান্নাতের সকল মহিলাদের থেকে বেশি মর্যাদার অধিকারী হবেন। কিন্তু মহিলাদের মধ্যে সর্ব প্রথম মা ফাতেমার আগে যে মহিলা জান্নাতে প্রবেশ করবেন তার না ”জামিলা”। তিনি একজন কাঠুরিয়ার স্ত্রী। অবশ্যই এটি কোনো ছহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। এটি একটি হেকায়াত দ্বারা বর্ণিত।



জান্নাতে মানুষের বয়স কত হবে?


হাদিসের ভাষ্যমতে, জান্নাতবাসীদের বয়স হবে ত্রিশ থেকে পয়ত্রিশ বছরের মধ্যে । তারা সবাই হবে যুবক-যুবতী।কেউ সেখানে বৃদ্ধ হবেনা। চুল সাদা হবে না।


আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ- রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতীদের মাঝে সর্বনিম্ন যে তারও হবে আশি হাজার সেবক, বাহাত্তর হাজার সঙ্গিনী। মোতী, যবরজদ এবং ইয়াকূত পাথরে নির্মিত জাবিরা থেকে সান’আ পর্যন্ত দূরত্বের ন্যায় বিস্তৃত এক বিরাট গুম্বজ বিশিষ্ট প্রাসাদ, তার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হবে।

 -যইফ মিশকাত ৫৬৪৮, যইফ জামি' সাগীর ২৬৬



একই সনদেই নাবী করিম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত,  তিনি বলেন : ছোট বা বড় যে বয়সেই মারা যাক না কেন জান্নাতে গিয়ে তার বয়স হবে ত্রিশ। কখনও তাদের বয়স বাড়বে না। জাহান্নামীদেরও অবস্থা তদ্রূপ হবে। এই সনদে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আরো বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন জান্নাতীদের যে তাজ (মাথার টুপি) হবে এর সবচে নিম্নমানের মোতীটির ছটাও পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে যা কিছু সব কিছু উজ্জ্বল করে ফেলবে। হাদীসটি গারীব। রিশদ্বীন ইবন সা’দ (রহঃ) -এর রিওয়ায়ত ছাড়া এটি সম্পর্কে আমাদের কিছু জানা নেই।


সুতরাং বলা যায় যে, জান্নাতে প্রবেশকারীদের বয়স অনন্তকালের জন্য একই নির্ধারিত থাকবে। তারা হবে চির যৌবনের অধিকারী।



জান্নাতের প্রথম দরজা কে খুলবেন?


রাসুল পাক (সা:) বলেছেন, 'কিয়ামতের দিন নবীদের মধ্যে আমার উম্মতের সংখ্যা হবে সর্বাধিক এবং আমিই প্রথম জান্নাতের দরজা খুলব। ' (মুসলিম শরীফ, হাদিস নং- ১৯৬)। 

অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, 'কিয়ামতের দিন আমি জান্নাতের দরজায় পৌঁছে দরজা খোলার জন্য ফেরেস্তাদের বলবো। 

সুতরাং, হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী বলােই যায়, বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মদ (সা:) ই সর্ব প্রথম জান্নাতের দরজা খুলবেন।


ইলম নাকি আমল কোনটি উত্তম?


শেষকথা:


এ পর্যায়ে আমরা বলতে পারি যে, মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সৃষ্টি করে এমনি এমনি ছেড়ে দেন নাই। আমাদের প্রতিটি কর্মের হিসাব দিতে হবে। ভাল কর্মের জন্য প্রতিদান হিসেবে আমাদরে জন্য রয়েছে অনন্ত সুখের স্থান জান্নাত। আমাদের প্রতিটি কর্মের জন্যই রয়েছে প্রতিদান।  এতো দামি, এতো সুন্দর একেকটি প্রতিদান যা কোনো মানব চোখ আগে কখনোই দেখেনি, যা কোনো মানব মস্তিস্ক কখনোই চিন্তাও করতে পারেনি।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সুপথে চলার তৌফিক দান করুন। আমাদের পরবর্তী ঠিকানা জান্নাত হিসাবে কবুল করুন।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url