এলম নাকি আমল-কোনটি উত্তম?
এলম নাকি আমল-কোনটি উত্তম?
আমাদের সমাজের অনেকের মধ্যেই এই তর্ক লক্ষ করা যায় যে, আমল নাকি ইলম বা জ্ঞান কোনটি উত্তম? উত্তরটি বুঝার জন্য আমরা আজকের পোস্ট লিখছি। আশা করি আজকের সংক্ষিপ্ত পোস্টের মাধ্যমে আলোচ্য তর্কের অবসান হবে।
আমল থেকে ইলম উত্তম:
আমল থেকে জ্ঞান উত্তম, এটি বুঝার জন্য প্রথমে আমরা একটি ঐতিহাসিক ঘটনার যুক্তি দেখি। ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠা পায়, শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর উপর ওহি তথা কোরান মাজিদ নাজিলের মধ্য দিয়ে। আর কোরান মাজিদই হলো ইসলাম ধর্মের মূল ভিত্তি। রাসুলুল্লাহ (সা:) এর প্রতি জিবরাইল আ: এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা কোরান নাজিল করেছিলেন মানবতার মুক্তির জন্য। সর্বপ্রথম কোরান নাজিলের ঐতিহাসিক ঘটনাটির দিকে আমরা নজর দিবো।
হেরা পর্বতের গুহায় নবী (সা:) ধ্যানে মগ্ন। এমন সময় হযরত জিবরাইল আ: আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে কোরান নিয়ে রাসূল (সা:) এর কাছে আগমন করেন। এবং কোরানের প্রথম আয়াত নাজিল হয়। আমরা জানি যে, কোরান নাজিলের পথম আয়ত হলো- ”পড় তোমার প্রভূর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।”
এটি যেহেতু কোরান মাজিদের প্রথম নাজিলকৃত আয়াত। এটির মাধ্যমে মূলত এটিই বুঝা যায় যে, আল্লাহ তায়ালা প্রথম যে অর্ডার জারি করেছেন, তা হলো - পড়ো।
আর পড়ার মানেই হলো জ্ঞান অর্জন করা। আমরা মুসলমান হিসাবে আল্লাহর আদেশ মানতে বাধ্য। সুতরাং আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক মানব জাতির প্রতি কোরান মাজিদের মাধ্যমে যে আদেশ নির্দেশ প্রদান করেছেন, তার মধ্যে সর্বপ্রথম আদেশ হলো - পড়ো।
সুতরাং আমরা বুঝতে পারি যে, পড়া বা জ্ঞান অর্জন করা প্রথম কাজ। তাই এটি নি:সন্দেহে উত্তম কাজ।
হাদিসে রাসুল (সা:) এর মাধ্যমেও প্রমাণ পাওয়া যায় যে, আমল থেকে ইলম উত্তম:
হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত আছ, তিনি বলেন, মুমিন ব্যক্তিদের পদমর্যাদার স্তরসমূহের উর্ধের আলেমগণের জন্য 7 শত স্তর রয়েছে, আর এই স্তরসমূহের মধ্যবর্তী স্থানে 5 শত বছরের ব্যবধান। বলা হয় যে, ইলম বা জ্ঞান 5 টি করানে আমলের চেয়ে উত্তম। কারণগুলো হলো-
- ইলম আমল ব্যতীত উপকার করে কিন্তু আমলা ইলম ব্যতিত উপকার করে না।
- ইলম প্রদিপের মতো একটি আলোকবর্তীকা, আর আমল উক্ত প্রদিপের আলো বিশেষ।
- ইলম নবীগনের স্থলাভিষিক্ত বস্তু, যেমন নবী (সা:) বলেন- আমার উম্মতের আলেমগণ বনী ইসরাইলের নবীদের সমান।
- ইলম হলো আল্লাহ তায়ালার গুণ, আর আমল হলো বান্দার গুণ। আল্লাহর গুণ বান্দার গুণের চেয়ে অবশ্যই উত্তম।
- রাসূল (সা:) বলেছেন- আমার এবং তোমাদের মাঝে যে পার্থক্য , আলেম আর গাইরে আলেমের মাঝে সমান পার্থক্য।
হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- হুজুর (সা:) বলেছেন- হযরত সুলাইমান আ: কে ইলম এবং রাষ্ট্র থেকে যে কোনো একটি বিষয় পছন্দ করহে বলা হলে, হযরত সুলাইমান আ: ইলমকে গ্রহণ করার ইচ্ছা পোষন করলেন, আর আল্লহ তায়ালা হযরত সুলাইমান আ: কে ইলম এবং রাষ্ট্র দুটিই দান করলেন। (দুররাতুন নাছিহিন)।
হাদিসে রাসুল (সা:) এর অন্য রেওয়াতে আছে- মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) বলেন- আল্লাহ তায়ালা আরশের নিচে একটি শহর বানিয়ে রেখেছেন, যার প্রবেশদ্বারে লিখা আছে, যে ব্যক্তি আলেমগনের সাক্ষাৎ লাভ করেছে সে যেন নবীগণের সাক্ষাৎ লাভ করেছে। (দুররাতুন নাছিহীন)।
অন্য একটি হাদিসে এসেছে যে, নবী (সা:) বলেছেন- আলেমগণের নিদ্রা আর জাহেলদের ইবাদাতের চেয়ে উত্তম।
সুতরাং , উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা একথা বুঝতে পারলোম যে, ইলম আমল থেকে উত্তম। তবে এর মানে এটি নয় যে, আমলের মূল্য নেই। অবশ্যই আমলের মূল্য আছে।
আমরা সাধারণত কোনো কাজ আঞ্জাম দেওয়ার জন্য সেই কাজের নানান দিকে জানতে হয়, আর এই জানার মাধ্যমে মূলত কাজটি সুন্দরভাবে আঞ্জাম দেওয়াই উদ্দেশ্য। এতে করে আমাদের কৃত কাজটি সুন্দর ও সুচারুরূপে সম্পাদন করতে পারি। এই জানা বা শেখার নামটিই তো ইলম। সুতরাং আমল করতে হলেও সেই আমল করার নিয়মাবলী, শর্তাদি আমাদের জানতে হয়। তবেই না আমাদের কৃত কাজটি সুন্দর ও সফল হয়।
সুতরাং আমল থেকে ইলম বা জ্ঞানই উত্তম কাজ। তাই আমরা আমাদের জ্ঞান অর্জনে সচেষ্ট এবং তা অনুযায়ী আমলী জিন্দেগী গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। এতে করে আমাদের উভয় জাহানের সফলতা লাভ করতে পারবো ইনশাল্লাহ।